ঢাকা শহরের একজন বৃদ্ধ রিক্সাচালক গুলজার হোসেন। বয়স প্রায় ৭৫। তার বয়স আয়-রোজগার করার মত উপযুক্ত না হলেও ভাগ্যের খেলায় এখনও রিক্সা চালানোর মত পরিশ্রমের পেশা তাকে করতে হচ্ছে। ঢাকা শহরের মিরপুর ১৩ তে ছোট একটি ঘরে গুলজার এবং তার স্ত্রী বসবাস করছে। প্রতিদিন সকাল হলেই জীবনের তাগিদে গ্যারেজ থেকে রিক্সা নিয়ে বের হয়ে যান গুলজার। বয়সের ভারে ঠিকমত রিক্সা চালাতে পারেন না। কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য তাকে এমন কঠিন পেশায় জরিত থাকতে হচ্ছে। গুলজার হোসেনের জন্ম কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের প্রামানিকভারি গ্রামে। তার বাবা গ্রামে দিনমজুরির কাজ করতো। ৫ ভাই আর ৪ বোনের সংসার ছিলো তার বাবার। এত বড় পরিবারের খাবার সংস্থানের জন্য হিমশিম খেতে হতো তাকে। তার দিনমজুর বাবা কোনোরকমে আয় করে তাদের সংসার চালাতো। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় গুলজারকে অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয়। পড়ালেখার প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ ছিলো না তার। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে আয়ের দিকেই মনোনিবেশ করেন গুলজার। ছোট বয়স থেকেই বাবার সাথে কাজে বের হয়ে যেতেন তিনি। ৬০র দশকে প্রতিদিন কাজ করে ১ টাকা থেকে ২ টাকা পেতেন যা এখনকার মূল্যে প্রায় ৫০০/৬০০ টাকা। তবে বয়সে ছোট থাকায় প্রতিদিন কাজ পেতেন না। অন্যদিকে তার বাবারও বয়স হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন কাজ থাকতো না। এভাবে কষ্ট করেই তাদের দিন চলতো। এরই মধ্যে…
মোহাঃ নজরুল ইসলামের বাড়ি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা অন্তর্গত নাচোল থানার নাচোল পোস্ট-অফিস মধ্যস্থিত গুঠইল গ্রামে। তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান মিলিয়ে তাঁর পরিবারে সদস্যের সংখ্যা চার জন। মোহাঃ নজরুল ইসলাম একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও একটি ছোট মুদি দোকান চালিয়ে নিজের জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁর দোকান পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর স্ত্রী নাসিমা বেগম সাহায্য করে থাকে। আমরা অনুসন্ধান করে জানতে পারি যে দোকানের আয় খুব সামান্য হওয়াতে তা দিয়ে তাঁর সংসার চালানো বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। আমরা জানতে পারি তাঁর এই মুহূর্তে একটি বেসরকারী সংস্থার নিকট প্রায় ৫০০০ টাকা ঋণ রয়েছে। ঘরে খাবারের ব্যবস্থা করতে তাঁর অনেক সময় অন্যদের কাছ থেকে চাল ধার করে আনতে হয়। যেহেতু মোহাঃ নজরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী বেশ প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করেন এবং তাদের বাসস্থানের আশেপাশে প্রচুর কৃষিভূমি রয়েছে, তাই তাদের একটি গরু পালন করা বেশ সহজ ও লাভজনক হবে জানা যায়। তাই প্রচেষ্টার পক্ষ থেকে মোহাঃ নজরুল ইসলামের জন্য বারো হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয় যা দিয়ে মোহাঃ নজরুল ইসলাম একটি গরু কিনে সেটি থেকে দীর্ঘমেয়াদি একটি আয়ের ব্যবস্থা করে পরিবারকে একটি ভাল অবস্থায় নিয়ে যাবেন।
মোহাঃ নাইমুল হকের (মন্টু) বাস করেন চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলাস্থিত নাচোল থানার নাচোল পোস্ট-অফিস অন্তর্গত গুঠইল গ্রামে। তাঁর বয়স প্রায় ৬৯ বছর এবং তাঁর স্ত্রীর বয়স ৬৫ বছর। তাঁর তিন সন্তানের প্রথমজন অতিসম্প্রতি পেটের সমস্যায় চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁর অন্য দুজন সন্তান বিবাহিত ও পৃথক সংসারে বাস করছেন। জনাব মন্টু ও তাঁর স্ত্রী দুই ঘরের একটি মাটির বাড়িতে বাস করেন। তাঁর ১১ শতাংশ কৃষিজমি রয়েছে তবে তিনি বয়সের ভারে শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন ফলে তাঁর কৃষিজমি থেকে তেমন আয় করতে পারেন না। তাই, তিনি তাঁর বাড়ির পাশে ছোট একটি দোকান পরিচালনার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। দোকান পরিচালনার একটি অংশ হিসেবে তিনি ডিজেল তেল বিক্রি করে থাকেন যা স্থানীয় শ্যালো মেশিন চালিত সেচকাজে ব্যবহৃত হয়। তবে তাঁর পুঁজির অভাব থাকায় যথেষ্ট পরিমাণে তেল রাখতে পারছেন না। তাই প্রচেষ্টার পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, জনাব মোহাঃ নাইমুল হককে (মন্টু) এক ব্যারেল (২১০ লিটার) তেলের বাজারমূল্যের সমপরিমাণ টাকার ব্যবস্থা করা হবে। মোহাঃ নাইমুল হকের ইতিমধ্যে দোকান পরিচালনা করার দশ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে, আমরা আশা করি যে এটি তাঁর একটি দীর্ঘমেয়াদি আয়ের ব্যবস্থা করবে।
দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান ইব্রাহিম। তিন ভাই-বোনের মধ্যে মেজো। বাবা কৃষি দিনমজুর, মা গৃহিনী। ইব্রাহিমের বাবার ৩ শতক বসত ভিটা এবং ৩৩ শতক কৃষি জমি। কৃষি জমিটা বর্তমানে ৫০ হাজার টাকায় বন্ধক দেওয়া আছে। ইব্রাহিমের বাবার একার আয়ে তাদের তিনভাই-বোনের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চলে।
ইব্রাহিম ছোট থেকেই লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী। সে বর্তমানে যশোর সিটি কলেজে অর্থনীতি বিভাগে প্রথম বর্ষে পড়ছে। তার পূর্ববর্তী পরীক্ষা গুলোর ফলাফল হচ্ছে- HSC: 3.83, SSC: 3.59, JSC: 4.22, PSC: 4.17
সে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত বাবার কাছ থেকে লেখাপড়ার খরচ নিয়েছে। এরপর মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত সে দিনমজুরের কাজ করে তার নিজের পড়ালেখার খরচ যোগাড় করেছে। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার পর থেকে টিউশনি করে নিজের খরচ যোগাড় করছে। তবে বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর তার টিউশনি বন্ধ হয়ে গেছে।
সে ছাত্র হিসেবে মাঝারী মানের হলেও লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ, পরিবারের আর্থিক দৈনতা, নিজের লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য দিনমজুরি টিউশনি করা, কম্পিউটার দক্ষতা ইত্যাদি বিষয় গুলো বিবেচনা করে তাকে প্রচেষ্টার উপকারভোগী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং তাকে ছাগল-পালনের জন্য ১৯,০০০/= টাকা দেয়া হয়েছে। সে এই টাকা দিয়ে দুইটি ছাগল কিনে তার ব্যবসা শুরু করেছে।
রেহেনা খাতুন, বয়স ৩৫। যদিও অর্থসম্পদ বা নিজস্ব জমিজমা নেই তারপরও স্বামী ও দুই ছেলে সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করছিলেন। রেহেনা বেগম এর স্বামীর নিজস্ব কোন বসত বা কৃষিজমি নেই। তারা দূঃসম্পর্কের এক আত্মীয়ের জমিতে ঘর তুলে থাকেন। রেহেনা’র স্বামী টুটুল মিয়া পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। তিনি সরকারী খাস জমি চাষ করতেন। তাদের গ্রামে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরকারী খাস কৃষি জমি আছে, তিনি সেখানে কিছু জমি বন্দোবস্ত নিয়ে চাষ করতেন। গত কয়েকমাস আগে হঠাৎ করে টুটুল মিয়া মারা যান। এরপর রেহেনা বেগম দুই ছেলেকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। তার বড় ছেলে এবার উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে পড়ে আর ছোট ছেলেটির বয়স তিন বছর। স্বামীই ছিলেন রেহেনা বেগমের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। রেহেনা বেগম-র স্বামী ভূমিহীন কৃষক হলেও ছেলের লেখাপড়ার বিষয়ে খুবই সচেতন ছিলেন, ছেলের লেখাপড়া যেনো কোন বিঘ্ন না ঘটে তাই তিনি কখনোই ছেলেকে কৃষিসহ কোন ধরনের কাজ করতে দেননি।
রেহেনা বেগম এর স্বামী মারা যাওয়ার সময় কোন ধরনের সঞ্চয় রেখে যাননি যা বিনিয়োগ করে তারা কোন ধরনের আয়ের ব্যবস্থা করবেন। এছাড়া তার ছেলেটিও কখনো কৃষি কাজ করেনি তাই তাদের পক্ষে আর কৃষিকাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যার কারনে তাদের সংসারে এখন যে কোন একটি উপর্জনমূলক কাজের প্রয়োজন। তার সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে প্রচেষ্টার উপকারভোগী করা হয়েছে এবং…